রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১০:৪৫ অপরাহ্ন

কিয়েভ কাঁপছে বিস্ফোরণে

স্বদেশ ডেস্ক:

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ নিয়ন্ত্রণে নিতে ধারাবাহিকভাবে ভারী গোলা ও বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া। ইউক্রেনের যোদ্ধারাও সাধ্যমতো রুশ সেনাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করছেন। আর এই সংঘাতের মাঝে পরে প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। গতকাল সোমবার সারাদিন কিয়েভের নানা স্থাপনায় বেশ কয়েকটি রুশ ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে মাঝে মাঝেই বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, উঠতে দেখা গেছে কালো ধোঁয়া।

বিবিসি, সিএনএন, আল জাজিরাসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানায়, গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ৭টার দিকে কিয়েভের প্রাণকেন্দ্রে একটি আবাসিক ভবনে আঘাত হানে ক্ষেপণাস্ত্র। এতে মুহূর্তে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় ভবনটি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২ জন নিহত ও আর কয়েকজন আহত হওয়ার খবর মিলেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও লাশ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একই দিন শহরের রাস্তায় ভেঙে পড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসস্তূপের আঘাতে একজন নিহত ও ৬ জন আহত হন। এ ছাড়া কিয়েভের আন্তোনভ শহরের স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরত্বে সিভিয়াতোশিন বিমান ঘাঁটিতে আন্তোনভ বিমান কারখানায় এদিন আঘাত হানে রুশ গোলা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, কারখানাটি থেকে কালো ধোঁয়া উড়ছে। তবে এ ভিডিওর সত্যতা যাচাই করা যায়নি বলে উল্লেখ করেছে বিবিসি।

কিয়েভ ছাড়াও মারিওপোল, লিভিভসহ ইউক্রেনের অন্যান্য শহরেও একের পর এক হামলা হচ্ছে। মারিওপোলে অব্যাহত হামলায় নিহতের সংখ্যা বাড়ছে। শহর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত শনিবার একদিনেই মারিওপোলের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ২৪টি বিস্ফোরণ ঘটে।

শহরের মানবিক পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ। প্রচন্ড তুষারপাতের মধ্যে শহরের বাসিন্দারা বিদ্যুৎ, পানি, ওষুধবিহীন অবস্থায় রয়েছেন। এখন পর্যন্ত রুশ হামলায় মারিওপোলে অন্তত ২ হাজার ১৮৭ জন বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। আহতাবস্থায় কাতরাচ্ছেন আরও বহু মানুষ। তবে রাশিয়া দাবি করেছে, মারিওপোল থেকে বেসামরিক নাগরিকদের বের করে নেওয়ার জন্য তারা অনেক সময় দিয়েছে। কিন্তু ইউক্রেন এসব মানুষকে বের হতে না দিয়ে তাদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। এ কারণেই মারিওপোলে এত প্রাণহানি হচ্ছে। একই দিন পোল্যান্ড সীমান্তের কাছে ইউক্রেনের লিভিভ শহরে একটি সেনা ঘাঁটিতে আঘাত হানে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র। এ ঘটনায় অন্তত ৩৫ জন নিহত হয়েছে।

এদিন রাশিয়ার একটি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, মস্কো বেসামরিক হতাহতের ঘটনা এড়াতে এবং কিয়েভসহ ইউক্রেনের জনবহুল অঞ্চলগুলোয় শক্তি প্রয়োগে বিরত থাকার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ কর্মকর্তারা আমাদের দেশের ওপর বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর দায় চাপাতে ইউক্রেনের বড় শহরগুলোয় যাতে আমাদের শক্তি প্রয়োগ করতে হয়, সেদিকে পরিস্থিতিকে ধাবিত করেছে। আমরা মনে করি, এ ধরনের অবস্থান উসকানিমূলক।

এদিকে চলমান যুদ্ধ বন্ধে ও সংকট নিরসনে চতুর্থ দফায় রাশিয়া ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি আলোচনা গতকাল শুরু হয়েছে। এর আগে উভয় দেশের প্রতিনিধিদের মুখোমুখি আলোচনা হলেও এবার বৈঠক হচ্ছে অনলাইনে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের প্রেস সেক্রেটারি দিমিত্রি পেসকভ দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাসকে জানান, বরাবরের মতো ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনায় রুশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকবেন প্রেসিডেন্ট পুতিনের উপদেষ্টা ভলোদিমির মেদিনস্কি।

এই আলোচনা যখন শুরু হচ্ছে ঠিক তার আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, পরবর্তী আলোচনার সময় ইউক্রেন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিদের অবশ্যই দুই দেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে বৈঠকের ব্যাপারে একমত হতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, সবার প্রত্যাশা এটি। রাশিয়াকে বুঝতে হবে, এটি জটিল বিষয় হলেও তা খুব জরুরি একটি উপায়। চলমান লড়াইয়ের মধ্যে কঠিন এ আলোচনা প্রক্রিয়া চালানোর ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য ইউক্রেন যেন প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল পায়। শান্তি, নিরাপত্তা, স্বাভাবিক জীবনযাপন এবং কার্যকরী নিশ্চয়তার জন্য তা জরুরি।

 

ইউরোপে কোভিড পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে

চলমান সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেন থেকে পালিয়ে ২২ লাখেরও বেশি মানুষ আশপাশের দেশগুলোয় আশ্রয় নিয়েছে। চলমান কোভিড মহামারীর মধ্যে যা পরিস্থিতিকে আবারও খারাপ পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তারা ইউক্রেন তো বটেই, তার প্রতিবেশী দেশগুলোকেও এ ব্যাপারে সতর্ক করেছে। ডব্লিউএইচওর তরফ থেকে রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে অনুরোধ করা হয়েছে, তারা যেন ইউক্রেনের স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং হাসপাতালগুলোর কোনো ক্ষতি না করে।

গত শনিবার এক বিবৃতিতে ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, ইউক্রেনের বাসিন্দাদের টিকাদানের মাত্রা মাত্র ৩৪ শতাংশ। যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অত্যন্ত কম। এ ছাড়া গত ৩-৯ মার্চ ইউক্রেন এবং সংলগ্ন দেশগুলোয় করোনা সংক্রমণের হার অত্যধিক বেড়েছে। গত ছয় দিনে ইউক্রেনসহ প্রতিবেশী দেশগুলোয় ৭ লাখ ৯১ হাজার ২১ জনের মধ্যে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজার ১২ জনের। যুদ্ধ এই পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877